১)
৪৩০০ খ্রীষ্টাব্দের পৃথিবী। নাসা’র বিজ্ঞানীরা মুখ কালো করে বসে আছেন। তাদের সব কম্পিউটারগুলো এলিয়েন এলার্ট দিচ্ছে, কিন্তু কোনো স্পেসশীপ কিংবা কোনো স্পেশাল ওয়েভলেংথ ধরতে পারছেনা। সন্ধ্যা থেকে পিপ পিপ করে যাচ্ছে, কিন্তু কোনো সিগন্যাল দিতে পারছেনা। আর থাকতে না পেরে চুন খা নামের এক চাইনীজ বিজ্ঞানী “হাইয়া” বলে এক আছাড় দিয়ে তার কম্পিউটারটা গুড়ো গুড়ো করে ফেললেন। ভাঙ্গা কম্পিউটার থেকে তখনো পিপ পিপ শব্দ হয়েই চলেছে।
২)
আজ ২৩শে মার্চ, জাতীয় পাকিস্তান দিবস। গেলমান আজম, সেলোয়ার হোসেন পাইদী, বাঁকা চৌধুরী, মতিউর রহমান হারামী আজ তাদের কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছেন। টপ র্যাটেড যুদ্ধাপরাধীদের এই হঠাৎ সংবাদ সম্মেলনে সারা দেশ তাজ্জব বনে গেছে। সারাদেশের আনাচে কানাচে থেকে সাংবাদিকরা হুড়মুড় করে ছুটে এলেন।
৩)
নাসা’র ঘাঘু বিজ্ঞানীরা অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারলো যে, বহিঃপৃথিবীর কেউ অনেক আগেই এসেছিলো এবং তারা চলেও গেছে হাজার বছর পুর্বে। কিন্তু, আলোর বেগের চেয়েও বেশী বেগে চলায় তারা এতো হাজার বছর পরে তা ধরতে পেরেছে। এক মাস ইনভেস্টিগেশনের পর রিপোর্ট থেকে জানা গেলো, স্পেস শীপটি বাংলাদেশ নামক প্রাচীন পৃথিবীর এক দেশে নেমেছিলো। তারা তৎক্ষণাৎ সেখানে গবেষনা করার জন্য রওনা দিয়ে দিলো।
৪)
সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়ে গেলো। একযোগে তা বিটিভি, চ্যানেল নাই, ইররে (ইভা রহমান রকস) টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত হতে লাগলো।
প্রশ্ন- “আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের কারণ কি?”
সেলোয়ার হোসেন পাইদী – “ আমি একজন উলামায়ে ছু। জীবনে অনেক গুনাহ করিয়াছি। নিজের গুনাহ নিজেই আর সহ্য করিতে পারছিনা। তাই, প্রিয় দেশবাসীর প্রতি আমার কিছু বানী বলার ছিলো”
গেলমান আজম – “ জ্বে, কথা সইত্য! ৭১ সালে আমরা বহুত আকাম করছি। অহন, আমাগো আয়ু শেষ। মাফ করার মালিক আল্লাহ পাক, তয় জজ সাহেব ক্ষমা করলেও দোষ নাই! আমরা স্বীকার কইরা লইছি সব কিছু”
প্রশ্ন- “আপনারা কি করেছিলেন, ঠিক করে বলুন তো?”
বাঁকা চৌধুরী – “ এই ছেমরী, বাংলা কথা বুঝোস না? আকাম করসি আকাম! মাইনষের ঘড় পুড়াইসি, মাইয়াগো নষ্ট করসি, মুক্তিগো ধইরা ধইরা জবাই করসি। আর কিছু শুনবার চাস?”
মতিউর রহমান হারামী – “ আহ হাহ ! বাঁকা তুম কিয়া কাররাহেহো? গোস্তাখী মাফ করেঙ্গে। হাম ভুল কিয়া। মাগার, আমরা মাফি চাইতেছি। পাকি আর্মি, মতলব হামারা মালিক রা বাঙ্গালী দের চিনতো নেহি। আমরাই উন লোগোকো সাব চিনায়া হে। সবকা খাশী, গরু জবাই করে করে খাওয়াত হে। খুবসুরত, কম বয়সী লেরকী লেকার হাম লোক মৌজ কিয়া থা। লেকিন, এখন আমরা বুড়া হয়া গেসি। আমাদের হাড্ডি পাইকা গেসে। এখন হাজতে নিয়ে ডিম থেরাপী দেবার কোনো সার্থকতা আছে? বলেন আপনেরা?”
ডিম থেরাপীর কথা মনে পরতেই পাইদী পেছনে হাত বুলাতে লাগলো।
প্রশ্ন – তো আপনারা আপনাদের দোষ স্বীকার করে নিচ্ছেন?
গেলমান আজম – “দোষের তো কিছু নাই এইখানে। আমরা তখন যা করসি, উনারা যদি এখন তা করে, আমরা মানা না করলেই তো হইলো? শোধবোধ!
পাইদী – “লা জোয়াব ইয়া গেলমান”
মুহুর্তের মধ্যেই সমস্ত কার্যালয় পুলিশ ও র্যাব ঘিরে ফেলে। ভেতরে ঢুকে দেখে শুধু সাংবাদিকরা সেখানে, চার আসামীর একজনও নেই।
৫)
ইন্টারনেটে দু হাজার বছর আগের ভৌগলিক ম্যাপ ঘেটে নাসার ২২জন বিজ্ঞানী এই বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, এখন তারা মগবাজার নামক স্থানে দাঁড়িয়ে আছেন। তারা খোড়াখুড়ি শুরু করে দিলেন। বিভিন্ন আইসোটোপ ব্যাবহার করে সেখানে কার্বণের অস্তিত্ব খুজে বের করতে লাগলেন। আধুনিক পৃথিবীর সব কিছুই সিনথেটিকের। এমন কি মানুষের ত্বক ও। ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মী থেকে বাঁচার জন্য জেনেটিক কোডিং করে এ ব্যাবস্থা করা হয়েছে।
হঠাৎ সি.এফ.এম (কার্বন ফাইন্ডার মেশিন) যন্ত্রটা প্রচন্ড জোড়ে বীপ বীপ করতে লাগলো। সাথে সাথে তারা খোড়াখুড়ি করা শুরু করে দিলেন। একটা প্রাচীনকালের সংবাদ পত্র খুজে পেলেন তারা। নাম “পচন আলু”, তারিখ দেয়া আছে ২৬শে মার্চ ২০১২ সালের। তারা ল্যাঙ্গুয়েজ ডিটেক্টর দিয়ে যে খবর উদ্ধার করলেন, তার অনুবাদ অনেকটা নিম্নরুপ –
উতপল কুম্ভ, ২৬শে মার্চ, ২০১২ :
গত দু সপ্তাহ আগে দেয়া ঝড় তোলা সংবাদ সম্মেলনের উপর ভিত্তি করে সেলোয়ার হোসেন পাইদী, বাঁকা চৌধুরী, গেলমান আজম ও মতিউর রহমান হারামীর ফাঁসী কার্যকর হয়েছে গতকাল রাত ১২টা বেজে ১ মিনিটে। গতকাল এ ঘটনার পর সারাদেশে আনন্দ মিছিলের ঢল নামে। মিষ্টির দোকানে মিষ্টির তীব্র সংকট দেখা দেয় এই সময়ে। তৎক্ষণাৎ বিরোধী দলের সদস্যদের কাছে তাদের অনুভুতি জানতে চাইলে তারা কিছু জানাতে প্রস্তুত নয় বলে জানান।
ওই সংবাদ সম্মেলনের রেশ ধরে পুলিশ ও র্যাবের যৌথ আক্রমনে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চার শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীকে খুজে বের করা হয়। বিতর্কিত ব্যাপারটি হলো, সংবাদ সম্মেলনের পর হঠাৎ বাতাসে মিলিয়ে গিয়ে কিভাবে ঢাকার বাইরে তারা আশ্রয় নিলো, তা এখনো খুজে বের করতে পারেনি পুলিশ। তবে, সেখানে উপস্থিত সকল সাংবাদিকগন আদালতে ওই সম্মেলনের পক্ষে সাক্ষ্মী দেন। আদালতে চার যুদ্ধাপরাধীর দেয়ালে মাথা ঠুকে কান্না করার দৃশ্যটি কেউ একজন ভিডিও করে ছড়িয়ে দেয়ায় তা এখন জন মোবাইলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তবে আদালত তাদের কোনো কুমিরের কান্নাকে প্রশ্রয় না দিয়ে ৩১শে মার্চের মধ্যে ফাঁসী কার্যকরের আদেশ দেন। আদেশ হবার পরও তারা চিৎকার করতে থাকে যে, ঐ চারজন তারা ছিলেন না। চিৎকার করে আদালতের পরিবেশ নষ্ট করার অপরাধে তাদের কে আরো এক সপ্তাহ ডিম থেরাপী দেবার আদেশ দেয় আদালত।
সারাদেশ আজ আনন্দে উদ্বেলিত, তবে এখনো কেউ জানেনা কে ছিলো ওই চার জন? কেনোইবা তারা তাদের নিজদের অপরাধ সর্বসম্মুখে মেনে নিয়েছিলো? এ প্রশ্নের উত্তর খুজছেনা এখন কেউই। তবে আদালতের রায়ের প্রতি আজ সারা বাংলাদেশের সমর্থন ছিলো অবিস্মরনীয়।
৬)
৯৩২৪ খ্রীষ্টাব্দ। এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সীর ম্যান্ডি গ্রহের দুই বন্ধু কথা বলছে। তাদের নাম কুক্কু আর রুক্কু।
- রুক্কু
- কি?
- যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাবস্থা তো করেই দিয়ে আসলাম।
- হুম। তো?
- ওদের তো আরো একটা ঝামেলা রয়ে গেছে।
- আর কতো? মানুষের সব ঝামেলা যদি আমরাই মিটাই, ওরা করবেটা কি?
- বোকার মতো কথা বলিস না। যুগ যুগ ধরে ওদের সমস্যা তো আমরাই মিটাচ্ছি। কিন্তু, বাংলাদেশের ঝামেলা মেটাতে মেটাতে আমার বিরক্তি ধরে গেছে।
- আমারো। নতুন কি হয়েছে?
- ওদের চার নেতার হত্যার বিচারটা বাকি।
- চল, করে দিয়ে আসি। কি আর করার! ওদের এক বুড়া লোক ছিলো, কবিতা লিখতো। বেশ বুদ্ধিসম্পন্ন ছিলো, আমি ওই লোকের জিনেটিক ম্যাপিং দেখেছি। সেই লোক কি বলেছিলো, জানিস?
- না। কি রে?
- “সাত কোটি বাঙ্গালীরে, হে বঙ্গ জননী, রেখেছো বাঙ্গালী করে। মানুষ করোনি”
হাসতে হাসতে তারা স্পেসশীপে স্টার্ট দিলো। ভো ভো শব্দ করে স্পেসশীপ লাল সবুজের দেশে যাত্রা করলো।