১)
- এই বয়সে এত্তো বড় ?
- হ! আমি তো অবাক!
- জিগামু নাকি? কে হাতাইসে যে এত্তো বড় ! হা হা হা
- ডাক দে !
মুন্না আর রঞ্জু বেগম রোকেয়া গার্লস স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে। সুন্দর মেয়েদের সাথে একটু মজা নিচ্ছে। প্রতিদিন ভাত খাওয়ার মতোই রুটিন মাফিক কাজ। মুন্না মেয়েটাকে ডাক দিলো।
- এই যে আপু, একটু শুনবেন?
মেয়েটা চুপ করে মাথা নীচু করে সামনে হাটতে লাগলো।
- এই যে, একটু শুনেন। লজ্জা পাওয়ার কিছু নাইতো! আমরা তো হাতানো জিনিসে হাত দেইনা, শুধু কিভাবে এত্তো বড় হলো, একটু যদি বলে যেতেন!
চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে রিনা’র। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে। এত্তোগুলো গার্জিয়ানের সামনে এইসব কথা। ছিঃ ! রিনা তারাহুরো করে একটা রিক্সা নিয়ে কাদতে কাদতে চলে গেলো।
- হ্যাহ ! কইতে পারবোনা কিন্তু করতে পারবো ! নষ্টা জানি কোথাকার!
- আরে আর কইসনা! পাশের বাসারটারে কাইল্কা কইলাম তোমার ঠোট তো চুমাইতে চুমাইতে কালো হয়ে গেসে, দাও আমি লাল বানায় দেই, সে কি কান্না! রাতে মা-বাপ আইসা হাজির! দিছি গাইল্লায়া!
- তোর বাপে না কমিশনার?
- তাইলে? বুঝে ওরা কমিশনার কি ? যখন খাইবো তখন বুঝবো!
মুন্না আর রঞ্জু আরো কিছু নীচু মানষিকতার কথা নিয়ে হাসাহাসি করে, রুটিন মাফিক আরো আধা ঘন্টা মেয়েদের ডিস্টার্ব করে বাসায় গেলো।
- আম্মা, কি করো ?
- এতক্ষন কই ছিলি?
- নোট ফটোকপি করতে গেসিলাম আম্মা! সামনে প্রি-টেস্ট না!
- খবর দেখসস? চাপাঁ রানী মহিলাটারে কেমনে মাইরা ফালাইসে! কি অবস্থা! এইসব পোলাপাইন কোন মা যে পেটে নিসে! কি হারাম খাইয়া জনম দিসিলো কে জানে!
- আরে এইসব হইলো ফকিন্নীর পুলাপান! আর মাইয়াগুলাও ভালা না আম্মা। কাপড়-চোপর ঠিক রাখবোনা, রাস্তায় পোলাগো দেখলেই রংঢং করবো। এগুলাও খারাপ। আম্মা, ২০টা টাকা দাওতো, কলম কিনা লাগবো!
মুন্না ৪টা বেনসন কিনলো। নতুন ৩টা নাম্বার পাইসে। আজকে কনফারেন্স কইরা মেয়েগুলারে জ্বালান লাগবে !
২)
রঞ্জু এখন মুগদায়। এক মেয়ের পিছা পিছে হাটতে হাটতে এসে পরেছে। রাস্তায় বেশ কয়বার কথা বলার চেষ্টা করে লাভ হয়নাই। ফোন নাম্বার চাইলেও দেয়নাই। মেয়েগুলা প্রচন্ড আনস্মার্ট! সমস্যা হইলো, এলাকার বাইরে যে আসলো, মুগদায় তার তেমন প্রতিপত্তি নাই। এখন যদি মেয়ে ভাই-টাই নিয়ে আসে, তাইলে তো ভবলীলা সাঙ্গ!
- ওই ছেলেটা ভাইয়া, ওই যে লাল শার্ট , থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট পরা ছেলেটা!
৬-৭টা ছেলে রঞ্জুর দিকে দৌড়ায় আসতেছে। রঞ্জুর আত্মা কেপে উঠলো, ইয়া আল্লাহ, ইয়া পরওয়ারদিগার! এই যাত্রা বাচাও!
- ওই হারামীর পুত, ওই বান্দীর পুত, দাড়া কইতাসি। তুই পালাবি কই শালা, খাড়া !
রঞ্জু দৌড়াচ্ছে, প্রানপনে দৌড়াচ্ছে। তার প্রচন্ড পিশাবের বেগ এসেছে, কোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে পিশাব করার উপায় নেই! সে দৌড়াচ্ছে, তার সামনে এখন শুধুই পথ, শেষ হচ্ছেনা।
৩)
মুন্নার ফোন বেজে উঠলো। বাসা থেকে ফোন এসেছে। এই মজার টাইমে ফোন ধরার কোনো মানে হয়না!
মুন্না আর তার পরানের বন্ধু মিশা মিলে এক মেয়েকে ভয় দেখিয়ে গলিতে নিয়ে এসেছে। তাদের সাথে গলিতে না ঢুকলে রাস্তায় তাকে দিগম্বর করে দিবে, এই ভয় দেখিয়ে তাকে গলিতে এনেছে।
- এই, ওড়না আমার হাতে দে।
- ভাই, আমারে ছাইড়া দেন। আপনের পায়ে পড়ি।
- ওই মিশা, মাগীর দুই হাত চাইপ্পা ধর তো! ওয় বেশী ফট ফট করতাসে
- খোদার কসম লাগে ভাই! আমারে ছাইড়া দেন। আমার আত্মহত্যা করন ছাড়া উপায় থাকবোনা ভাই। আমারে মাফ কইরা দেন ভাই!
- চোপ! তোর লগে তখন একটু গল্প করতে চাইছিলাম তখন বহুত ভাব দেখাইসিলি। তুই ফাহাদের লগে কথা কইতে পারোস আর আমার লগে পারোস না ক্যান? ফাহাদে কেলাসে ফাস্ট হয় দেইখ্যা ? অহন দেখ , তোরে মজাটা দেখাই। মিশার বাচ্চা তোরে কি কইলাম!
- ভাই, আমারে মাফ কইরা দেন। আমি আর কারো লগে কথা কমুনা। আমারে ছাইড়া দেন!
আবারো মুন্নার ফোন আসলো। মিশার হাতে মেয়েটাকে ধরিয়ে একটু দূরে এসে মুন্না ফোন ধরলো।
- হ্যালো
- মুন্নারে, বাপ , তুই কই গেলি রে ............ তোর বোইন তো গলায় ফাসি দিসেরে বাপ......। ও বাপ রে ............ ও আল্লাহ .........
মুন্না আর কিছু শুনতে পেলোনা, হাত থেকে মোবাইল পরে গেলো। ছুটে গেলো বাসায়।
৪)
গনপিটুনিতে এক বখাটের মৃত্যু
গতকাল মুগদাপাড়ায় গনপিটুনিতে রঞ্জু(১৭) নামে এক স্কুল ছাত্রের মৃত্যু ঘটে। এলাকাবাসীর তথ্য অনুযায়ী, স্মৃতি(১৫) নামের এক মেয়ের পিছে পিছে সে এখানে আসে এবং মেয়েটাকে বারবার যৌন হয়রানী করে। এলাকাবাসী তা প্রত্যক্ষ্য করে তাকে বোঝানোর পরও সে স্মৃতিকে উদ্দেশ্য করে বাজে উক্তি করতে থাকে। এক পর্যায়ে সে স্মৃতির বস্ত্র হরণে উদ্যত হলে এলাকাবাসীর বেদম পিটুনীতে তার উক্ত স্থলে মৃত্যু ঘটে।
দৈনিক হায় হায় দিন, স্টাফ রিপোর্টার।
( রঞ্জু মৃত্যুর আগে পিশাব করতে পারেনি। মৃত্যুর মধ্যে দিয়েই তার পিশাব বের হয়ে যায়)
৫)
মুন্নার বোন, ঈশিতা ফাসি দিয়েছে। রাস্তায় আসার সময় কিছু বখাটে ছেলে তার শরীরে আপত্তিকর জায়গায় ধরাধরি করে এবং রাস্তায় তাকে লাঞ্চিত করে। সে সহ্য করতে না পেরে বাসায় এসে গলায় ওড়না ঝুলিয়ে ফাসিতে ঝুলাটাকেই জীবনের শান্তিময় অধ্যায় বলে মেনে নেয়।
মুন্না বাকরুদ্ধ হয়ে পরে। যে ওড়না সে আরেক মেয়ের গলা থেকে খুলে নিয়েছিলো, সেই ওড়না আজ তার বোনের গলায় ফাসি হলো।
মুন্না বর্তমানে অপ্রকৃতস্থ। তাকে বেশীরভাগ সময়ই দেখা যায় ওড়না হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে।
শনিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১০
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
4 মন্তব্য(গুলি):
ashob asholei hoi????
ami seriously jantam na ...... nishom!!!!?????
akhn to rastai joto sele dekhbo shob gulakei ........
by da way nishom dosto ami tor jnno koyekta notun notun gali shikhsi thank u re dosto hihi..;p
ok ami seriously boltesi tor jnno ami ei typ kisu j ase seta jante parsi a big big THANK U ...
তুমি যে RS HIMA আমি তো বুঝবারই পারিনাই !
হুম, হয় রে ! আসলেই হয় !
এটাই প্রকৃত চিত্র, পত্রপত্রিকায় এর কিছুই আসে না। গল্পটা স্পর্শ করে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন